ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে কিছু কথা – যা আগে কেউ বলেনি

আপনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে আপনি ফ্রিল্যান্সিং করবেন। অমুক তমুক যায়গায় কোর্স করায়। আপনি সেই কোর্স করে ফ্রিল্যান্সার হবেন। যদি এমন মনোভাব থাকে তাহলে ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে কিছু কথা জেনে নিন।

আমাদের দেশে এখনকার সময়ে সবার মুখে মুখে শুধু ফ্রিল্যান্সিং কথাটি শোনা যায়। কেউ জানতে চায় বা কেউ শিখতে চায়।

ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে কিছু কথা

কিন্তু আদৌতে বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং শেখা উচিত কিনা। কিংবা ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারে যাওয়া উচিত কিনা? অথবা ফ্রিল্যান্সিং করে কেমন আয় করা সম্ভব।

আবার, এটাও জানা উচিত যে ফ্রিল্যান্সিং এর ভবিষ্যৎ কেমন? সহজ কথায় একজন নতুন ফ্রিল্যান্সাররের যা কিছু জানা দরকার তার সবই জানতে পারবেন।

ফ্রিল্যান্সিং কি?

যারা ফ্রিল্যান্সিং করতে চায় কিংবা ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে জানতে চায় তাদের অনেকেরই ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে সঠিক ধারনা থাকে না।

Ghoori learning এর মতে “ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) মূলত এমন একটি পেশা যেখানে আপনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। এটি সাধারন চাকরির মতোই, কিন্তু ভিন্নতা হলো এখানে আপনি আপনার স্বাধীন মতো কাজ করতে পারবেন”।

তাহলে কি আমার ফ্রিল্যান্সিং করা উচিত?

এখানেই আসে মূল কথা। ফ্রিল্যান্সিং কাজে প্রচুর স্বাধীনতা রয়েছে। তাই না??? মোটেও তাই নয়। আপনি একজন ফ্রিল্যান্সারকে জিজ্ঞেস করলেই বুঝবেন।

কোনো কোনো ফ্রিল্যান্সারকে দেখবেন যে তারা রাতে ঘুমায় না। কারণ, তাদরেকে সারা রাত কাজ করতে হয়।

আর, একজন চাকরিজীবীর কি তা হয়? সে সারাদিন অফিস করে এসে রাতে ভালো মতো ঘুমাতে পারে।

এগুলাতো একজন সফল ফ্রিল্যান্সারের কথা বলেছি যারা নিয়মিত কাজ পায় এবং কাজ করে।

এখানে ভালো এবং মন্দ দুই দিকই রয়েছে। প্রথমত, একজন সফল ফ্রিল্যান্সার কোনো রকম অফিস কিংবা দোকানের ঝামেলা ছাড়াই একটা ভালো পরিমান আয় করতে পারছে। যেটা চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে হয় না।

অপরদিকে, সে কিন্তু চাকরিজীবীর মতো চলা ফেরা করতে পারে না। অর্থাৎ, লাইফস্টাইলের কথা বুঝাচ্ছি।

ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে কিছু কথা

ফ্রিল্যান্সিং যতটা সহজ মনে হয় আসলে ততটা সহজ নয়। এখানে বিশাল বিশাল চ্যালেঞ্জ থাকে। এবং আপনাকে আমেরিকার মতো কোনো ব্যক্তির সাথে প্রতিযোগিতা করতে হবে।

তাও আপনি তো সফল হতে পারবেন কিনা তা নিশ্চয়তা একমাত্র আপনাকেই বুঝতে হবে। ফ্রিল্যান্সিংয়ের অনেক চ্যালেঞ্জ থাকে যেগুলো পুরোটাই নতুনদের জন্য।

নিচের আলোচনা থেকে আপনি পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন। এবং সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন যে আপনি ফ্রিল্যান্সিং করবেন কিনা।

ফ্রিল্যান্সিং করলেও কিভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে সে ব্যাপারে একটা ধারণা পেয়ে যাবেন।

নতুন ফ্রিল্যান্সাদের সফল হবার সম্ভাবনা কতটুকু?

একটা লোক যে কিনা ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে চায় সে কিন্তু ঠিকমতো গাইডলাইনও পায় না। আমাদের দেশের নীতির অবস্থা খুবই খারাপ।

যারা ফ্রিল্যান্সিং এ সফল হয়েছে তারা ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে বাইরের কাউকে তেমন কিছুিই বলে না। অর্থাং ফ্রিল্যান্সিং জগতের যত প্রাইভেট টিপস আছে তার কোনোটাই একজন নতুন ফ্রিল্যান্সার জানে না।

আর, পুরোনো কেউ তো কোনো কথাই শেয়ার করে না। (সবাই এক না)

এখানেই একজন নতুন ফ্রিল্যান্সার আটকে যায়। কারণ সেই পুরোই নতুন। তার ওপরে হয়তো দুই একটা কোর্স করেছে যেটা পুরোটাই অনলাইনে।

তাই সে তার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার শুরু করতে কোন অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সার থেকে তেমন কোন সাপোর্ট পায় না।

আবার, আমাদের দেশে যারা কোর্স করায় তাদের বেশিরভাগই কোন অভিজ্ঞ নয়। ওরা প্র্যাকটিক্যালি তেমন কোন কাজ পায় না।

দেখা যায় তাদের মূল ইনকাম সোর্স ঐ কোর্সগুলো। যেগুলো তারা বিক্রি করে মানুষকে ফ্রিল্যান্সিং শেখায়।

তাই বলতে পারেন একজন নতুন ফ্রিল্যান্সার এর অনেক চ্যালেঞ্জ থাকে। আর এগুলো মোকাবেলায় তারা তেমন কোন সাপোর্ট পায় না।

শুধুমাত্র যারা ভালো ট্রেইনারের কাছে কোর্স করে কিংবা যারা অভিজ্ঞ ব্যক্তি থেকে সাপোর্ট পায় তারাই সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

নতুনদের মার্কেটপ্লেসে কাজ পাওয়ার চ্যালেঞ্জ

ফ্রিল্যান্সাররা মূলত মার্কেটপ্লেস থেকে কাজ অর্ডার নিয়ে তারপরে সেই কাজ জমা দিয়ে পেমেন্ট গ্রহন করে।

কিন্তু যে নতুন প্রোফাইল তৈরি করেছে সে কিন্তু সাথে সাথে কোন কাজ পায় না। এ ক্ষেত্রে ভিন্নতা ভেদে অনেক সময় অপেক্ষা করতে হয়।

কেউ দুই মাসের ভিতরে প্রথম কাজ পেয়ে যায়। আবার কারো 6 মাস লাগে। দেখতে দেখতে কারো এক বছরও লাগে।

আর সর্বশেষ কেউ কেউ কাজ না পেয়ে মার্কেটপ্লেস থেকে বেরিয়ে আসে। বলা যায় সে ফ্রিল্যান্সিং ছেড়ে দেয়।

নতুনরা কেন সহজে কাজ পায় না?

আমরা নিজেরাই অন্য কাউকে দিয়ে কাজ করানোর আগে তার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জেনে নেই। যদি সে কাজের উপযোগী হয় তাহলে আমরা তাকে কাজটি দিই।

সেরকমই মার্কেটপ্লেসের ক্লায়েন্টরা আপনাকে কাজ দেওয়ার আগে আপনার প্রোফাইল দেখে। এক্ষেত্রে নতুনদের প্রোফাইলে কোন কাজ না থাকায় তাদের কোনো রেটিং থাকে না।

তাই ক্লায়েন্টরা ঝুঁকি নিয়ে নতুনদের মাধ্যমে কাজ করায় না। আবার দেখা যায় ক্লায়েন্টদের হাতে অনেক অপশন থাকে।

মানে তারা যে কাজটি করাতে চায় সেই কাজের অনেক অভিজ্ঞ এবং পুরাতন ফ্রিল্যান্সার আছে। তাই ক্লায়েন্টরা অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সারদের মাধ্যমে কাজ করিয়ে নেয়।

ফ্রিল্যান্সিং এর প্রতিযোগিতা

যখন 2010 থেকে 2012 সালের মধ্যে দেশের সেরকম কোন কম্পিউটার ছিল না কিংবা ইন্টারনেট ব্যবস্থা ভাল ছিল না।

তখন যারা আন্তর্জাতিক বাজারে কাজ করেছে তারা সহজেই সফল হতে পেরেছে। কিন্তু এখনকার সময়ে ফ্রিল্যান্সারের অভাব নেই।

এবং আমরা বাংলাদেশে খেয়াল করলে দেখি যে সবার মুলে ফ্রিল্যান্সিং শব্দটা উচ্চারণ হচ্ছে। সবাই যখন ফ্রিল্যান্সিং জগতে আসতে চায় তখন প্রতিযোগিতাও বেড়ে যায়।

দেখবেন আপনি যখন গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখে মার্কেটপ্লেসে যাবেন তখন আপনার মত হাজার হাজার প্রোফাইল রয়েছে যারা মার্কেটপ্লেসে গ্রাফিক্স ডিজাইন করছে।

আর, ফ্রিল্যান্সিং শুধুমাত্র বাংলাদেশেই নয়, এটা সারা বিশ্বের মানুষজন করে আসছে। তাই এখানে প্রতিযোগীতা হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে।

মানে আপনি এখানে গ্রাফিক্স ডিজাইন করে ফ্রিল্যান্সিং করার চিন্তা করছেন, ঠিক একই সময়ে আপনার মতো আমেরিকার কেউ গ্রাফিক্স ডিজাইন করার চিন্তা করছে।

এখানে আপনার প্রতিযোগিতা করতে হবে সেই আমেরিকান ব্যক্তির সাথে। তাহলে বুঝতেই পারছেন যে এখানে কি পরিমান দক্ষতার প্রয়োজন।

তাই সব মিলিয়ে বলা যায় যারা ফ্রিল্যান্সিং শিখতে চায় তাদের উচিত আগে এখানে উল্লেখ করা ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে কিছু কথা জেনে নেয়া।

তাহলে তারা ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে কি রকম প্রস্তুতি নিতে হবে সেটা বুঝতে পারবে।

শেষ কথাঃ

আপনার উচিত আগে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে জানা। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে প্রতিযোগিতা কেমন হয়? নতুনদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং করতে কি কি বাধার সম্মুখীন হয়? এবং ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে কিছু কথা যা হয়তো অনেকে জানে না।

সবমিলিয়ে আজকের পোস্টটি একজন নতুন ফ্রিল্যান্সার এর জন্য খুবই প্রয়োজনীয় বলে আমি মনে করি।

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন। আর আপনার কোন মন্তব্য থাকলে কমেন্ট করে জানিয়ে দিন।

ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে আরও জেনে নিনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *