বর্তমান সময়ে সৌদি আরব সহ সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে তাদের নিওম (NEOM) দ্য নিউ ফিউচার স্মার্ট সিটি নিয়ে।

NEOM বা নিওম সৌদি আরবের ভিষন ২০৩০ এর একটি প্রজেক্ট। যেখানে এমন একটি শহর গড়ে উঠবে যেটা আর বিশ্বের কোথাও নেই।

এই সিটি সম্পর্কে মধ্যপ্রাচ্যের সকল দেশ সহ ইউরোপীয় দেশগুলোতে খুবই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কিছু আলোড়ন হয়েছে মতের পক্ষে এবং কিছু মতের বিপক্ষে।

যার কারণ হচ্ছে তাদের যে প্রজেক্ট সেরকম প্রজেক্ট আর আগে পৃথিবীতে একটাও তৈরি হয়নি। তাই কেউ বলছে এই পরিবর্তনটি যুগান্তরকারী হতে চলেছে।

আবার কেউ কেউ মন্তব্য করছে তাদের প্রজেক্টটি সম্পন্ন হওয়া সম্ভব হবে না। কারণ তারা যেভাবে মডেল তৈরি করেছে সেভাবে আর আগে কোথাও হয়নি।

তো যাইহোক! আজকে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করার চেষ্টা করব নিওম (NEOM) আসলে কি? এবং এর ডিজাইন কেমন।

যদি সত্যি সত্যিই তৈরি হয়ে যায় তাহলে সারা বিশ্বে এটি কেমন প্রভাব ফেলবে তার পুরো আলোচনার একটা সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়ার চেষ্টা করব।

নিওম (NEOM) কি?

এখানে দুটি শব্দের সমন্বয়ে নিওম (NEOM) শব্দটি হয়েছে। প্রথম তিনটি অক্ষর প্রাচীন গ্রীক উপসর্গ NEO-অর্থ “নতুন” থেকে এসেছে।

আরেকটা শব্দ হচ্ছে M। যেটা সৌদি আরবের মোস্তাকবালের সংক্ষিপ্ত রুপ। এবং এটি একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে ফিউচার।

এই দুইটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত হয় “নতুন ফিউচার” আর বাকী সিটি অংশ যুক্ত করলে দাঁড়ায় নিউ (নতুন) ফিউচার সিটি।

নিওম নিয়ে সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

এখন পর্যন্ত সৌদির এই একটা প্রজেক্ট যেটা সারা বিশ্বে আলোচনা তেরি করেছে। এই প্রজেক্ট এর মূল কাহিনী হচ্ছে প্রজেক্টটিতে। 170 মিটার লম্বা এই নিওমে থাকবে ৩টি শহর।

শহর ৩টি হলোঃ

  1. Trojena
  2. Oxagon
  3. The line

Trojena – নিওমের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর।

Trojena শহরটি সৌদি আরবের আকাবা উপকূল থেকে 50 কিমি দূরে অবস্থিত – 1,500 মিটার থেকে 2,600 মিটার পর্যন্ত উচ্চতা এবং প্রায় 60 বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে।

এখানে সৌদি আরবের আকাবা উপকূলটির পরিবেশ মোটেও স্থিতিশীল নয়। তাই সেখানে তাপমাত্রার উপর ভিত্তি করে Trojena শহরটি তৈরি হবে।

এবং সেই শীতল পরিবেশে খুবই মনমুগ্ধকর একটি ভিউ তৈরি হবে। যা সত্যিই অসাধারণ হয়েছে।

ট্রোজেনা (Trojena) হয়ে উঠবে NEOM এবং সারা বিশ্বে সবচেয়ে চমকপ্রদ গন্তব্যগুলির একটি।___NEOM

এই শহরটির মূল আকর্ষন হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে পর্বত পর্যটনকে নতুনভাবে উপস্থাপন করবে।

(আপাতত আমি সংক্ষেপে বলে যাচ্ছি। প্রতি আপডেটে নতুন নতুন তথ্য যুক্ত করা হবে।)

OXAGON – নিওমের এডভান্স ইন্ডাস্ট্রি

এই শহরটি খুবই এডভান্স। এবং ইন্ড্রাস্টিায়ালের জন্য খুৃবই গুরুত্বপূর্ণ। আর, শহরটির ফিচার হলোঃ নেক্সট-জেনার স্বয়ংক্রিয় এবং সমন্বিত পোর্ট এবং সাপ্লাই চেইন

গবেষণা এবং উদ্ভাবনের জন্য একটি উৎসাহী ইকোসিস্টেম, অ্যাডভান্স বিপ্লবকারী শিল্পের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ, বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য গ্লোবাল গেটওয়ে, 100% ন্যাচারাল শক্তি দ্বারা চালিত,

ব্যবসায়ের জন্য এক অতুলনীয় পরিবেশ, পৃথিবীর অন্যান্য পরিবেশ থেকে ব্যতিক্রমী বাসযোগ্যতা, ইনভেস্টমেন্ট এর জন্য সবচেয়ে কেয়ারফুল একটি প্লেস (place)।

The line – ভবিষ্যতের শহর

The line শহরটিকে নিওমের ভবিষ্যতের শহর বলা হয়। নিওম প্রকল্পটিই যেহেতু ইউনিক, তাই এই শহরগুলো হবে সর্বোচ্চ পরিবেশ বান্ধব।

দ্য লাইন শহরটি মাত্র ২০০ মিটার চওড়া হবে। এবং 170 কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। যেটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 500 মিটার উপরে।

নিওমের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে দ্য লাইন সিটিতে মোট ৯ মিলিয়ন লোকের বাসযোগ্য থাকবে। এবং পুরোটা মাত্র ৩৪ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে।

সারা বছর ধরে দ্য লাইন সিটি আদর্শ জনবায়ু নিশ্চিত করতে। অর্থাৎ এখানে সারা বছরন জুড়ে এমন জলবায়ু নিশ্চিত করবে যা মানুষের স্বাস্থা সুরক্ষায় কাজ করবে।

২০ মিনিটের এন্ড-টু-এন্ড ট্রানজিট সহ দ্রুত গতির ট্রেন চলবে। বলতে পারেন পুরো শহরের এক পাশ থেকে অন্য পাশে যেতে মাত্র ২০ মিনিট লাগবে।

কেনো নিওম এর মতো প্রজেক্ট তৈরি করা হচ্ছে?

এটা একটা যুক্তিসঙ্গত প্রশ্ন যে কেন নিওম এর মত একটা প্রজেক্ট তৈরি করা হচ্ছে। যেটা পৃথিবীতে আর আগে তৈরি হয়নি।

এমনকি উন্নত দেশ যেমনঃ আমেরিকা, সিঙ্গাপুর, চায়না, জাপানি দেশগুলোর মতো কোনো দেশেই এমন প্রজেক্ট হাতে নেয় নি।

তাহলে কেনো সৌদি আরবের মতো একটা দেশ এমন প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছে? এখানে কিছু ভৌগলিক ব্যাপার রয়েছে।

আমরা সবাই জানি যে সৌদি আরবের একমাত্র ইনকাম সোর্স হচ্ছে তেল বিক্রয়।

আমরা সবাই এটাও জানি যে কোনো সম্পদই চিরস্থায়ী থাকবে না।

সেক্ষেত্রে সৌদি আরবের তেলের খনিও চিরস্থায়ী হবে না।

আর যখনই তাদের তেল শেষ হয়ে যাবে ঠিক সেই মুহূর্তে তাদের দেশ অচল হয়ে যাবে।

যেটা পুরো একটি জাতিকে নিমিষে ধ্বংস করে দিতে পারে।

এমনকি অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যেতে পারে। সুতরাং এখানে বলাই যায় বিশাল ভৌগলিক ব্যাপার জড়িত রয়েছে।

ভবিষ্যতের এমন সমস্যার কথা চিন্তা করে সৌদির যুবরাজ প্রিন্স সালমান এমন পরিকল্পনা করেছেন।

যাতে করে তাদের তেলের খনি শেষ হয়ে গেলেও তাদের দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে পারে।

সেজন্য তারা তাদের দেশে একটা ট্যুরিজম পরিবেশে তৈরি করতে চাচ্ছেন। এবং সেজন্য সবচেয়ে আনকমন এবং ইউনিক একটা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে। যেটার নাম হচ্ছে নিওম (NEOM)।

নিওম (NEOM) প্রজেক্টটিতে কতটা সফলতা পাবে?

এমন একটা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে যেটা পৃথিবীতে আর আগে কেউ তৈরি করতে পারেনি বা করে নি। সেজন্য অনেকের মতবাদ রয়েছে।

কেউ বলেছে নতুন পৃথিবীর উন্মোচন হবে। যেটা সৌদি আরবের হাত ধরেই হবে। কারণ তারা এমন টেকনোলজি ব্যবহার করবে যেটা পৃথিবী তার আগে কেউ করে নি।

আবার কেউ কেউ বলছে যেহেতু আর আগে পৃথিবীতে এরকম কোন প্রজেক্ট তৈরি হয়নি তাই, এই প্রজেক্টটি লক্ষ অনুযায়ী সফলতা অর্জনে ব্যর্থ হতেও পারে।

তবে এখানে পুরো ব্যাপারটি দেখার বিষয়। কারণ আর আগে এমন প্রজেক্ট তৈরি হয়নি। আবার এটাই প্রথম প্রজেক্ট যেটা বিশ্বের কোথাও নেই।

নিওম (NEOM) বাসযোগ্য বা ব্যবহারের জন্য কতটা উপযুক্ত হবে?

যেহেতু এই প্রজেক্টটি সৌদি আরবে হতে যাচ্ছে তাই অনেকে মনে করে সৌদির নিয়ম কানুনের দ্বারায় প্রভাবিত হতে পারে।

কিন্তু যতটুকু জানা যায় পুরো নিওম শহরের জন্য আলাদা আইন তৈরি হবে। অর্থাৎ আলাদা প্রশাসন ব্যবস্থা থাকবে।

এবং সেই প্রশাসনের দ্বারা পুরো অঞ্চলটি পরিচালিত হবে। তাই নিওমকে আলাদা জগত বলা-ই যেতে পারে।

নিওম নিয়ে শেষ কথাঃ

যদি সত্যিই নিওম (NEOM) এর মত কোন শহর তৈরি হয় তাহলে এটা হবে সারা বিশ্বের মানবজাতির জন্য এক যুগান্তকারী পরিবর্তন।

এবং নতুন রেকর্ড তৈরি করবে সৌদি আরব। সেইসাথে হয়তো তাদের দেশ এবং জাতি বেঁচে যেতে পারে।

আজকের পোস্টটিতে খুব সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে।

তবে খুব শীঘ্রই আরও তথ্য যোগ করা হবে। ততক্ষণ সাথে থাকুন। আর পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করে দিন ধন্যবাদ!

উইকি সম্পর্কে আরও জানুনঃ