গুগল ফটো অ্যাপস কি? কিভাবে ব্যবহার করবেন? গুগল ফটোতে ছবি ব্যাকআপ করুন

Home » গুগল ফিচার » গুগল ফটো অ্যাপস এর ফিচার

সারা বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় টেক কোম্পানি হল গুগল। এবং গুগলের এমন সব সার্ভিস আছে যেগুলোতে প্রতিনিয়ত মানুষ তাদের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করতে পেরেছে। তার মধ্যে একটি সার্ভিস হলো গুগল ফটো অ্যাপস।

গুগল ফটো অ্যাপস এর সকল ফিচার

গুগল যখন থেকে তাদের মেইল সার্ভিস শুরু করেছে তখন থেকে প্রতি মেইল একাউন্টে ১৫ জিবি স্টোরেজ ফ্রি দিয়েছে।

এই স্টোরেজটি দিয়ে গুগলের সকল সার্ভিস ব্যবহার করা যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে গুগল মেইল, গুগল ড্রাইভ, এবং গুগল ফটো।

বর্তমান সময় কিংবা যে কোনো সময়ই একজন মোবাইল ব্যবহারকারীর জন্য সবচেয়ে প্যারাময় ব্যাপার হচ্ছে হঠাৎ করে সকল ফটো কিংবা গ্যালারির সবকিছু ডিলিট হয়ে যাওয়া।

ঠিক এমমনই সময় আমাদের সকল ডেটা (ফটো, ভিডিও) রিস্টোর বা ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে গুগল ফটো সার্ভিসটি।

যেখানে আপনি আপনার মেইলের ব্যাকআপ ফাইলটির মাধ্যমে সকল ফাইল ফিরে পাবেন।

এমনকি প্রতিটা ফটো কিংবা ভিডিও ফাইল আপনার গ্যালারিতে যুক্ত হবার সাথে সাথে অটোমেটিকভবে ফটোতে ব্যাকআপ হয়ে যায়।

এত সকল সুবিধা আপনি নিতে পারবেন শুধু মাত্র আপনার যদি একটা গুগলের মেইল একাউন্ট থাকে। যাকে আমরা জিমেইল বলে থাকি।

তাহলে চলুন আজকে আপনাদেরকে জানাই গুগল ফটো’র যেসকল ফিচার এবং সুবিধা রয়েছে তা কিভাবে উপভোগ করবেন।

গুগল ফটো কি?

গুগল ফটো মূলত google এর একটি জনপ্রিয় সার্ভিস যেটা অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম এর গ্যালারি হিসেবে কাজ করে।

এই মুহূর্তে যতগুলো অ্যান্ড্রয়েড ইউজার আছে তাদের মধ্যে মাঝে প্রায় 5 বিলিয়ন বার এই গুগল ফটোজ অ্যাপসটি ইনস্টল কর হয়েছে।

গুগলের এই সার্ভিসের যতগুলো প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছে তাদের মধ্যে গুগল সবার থেকে এগিয়ে আছে।

কারণ গুগলের এই গ্যালারি অ্যাপসটি সহজে আপনার গ্যালারিকে মেমোরাইজ করতে পারে।

এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় যে ফিচার সেটি হলো আপনি যে ইমেইলি দিয়ে গুগল ফটোজ ব্যবহার করবেন সেই মেইলে ১৫ জিবি ব্যাকআপ স্টোরেজ পাবেন একদম ফ্রি তে!

এজন্য আপনি গ্যালারিতে যত ফটো কিংবা ভিডিও রাখবেন সবগুলো অটোমেটিক গুগল ক্লাউডে ব্যাকআপ হতে থাকবে।

তাই বলা যায় যে আপনার মোবাইলের স্টোরেজ লোড হবার কোনো ভয় থাকবে না।

এমনকি কোনো কারণে যদি আপনার মোবাইল নষ্ট হয়ে যায় তাহলে আপনি সেই ব্যাকআপ ফাইলের মাধ্যমে রিস্টোর করতে পারবেন।

গুগল ফটো এর ফিচার/সুবিধা সমূহ

প্রতিটা মোবাইলে গুগলের ফটো অ্যাপটি প্রাইমারি অ্যাপস নাও হতে পারে।

অনেক মোবাইলে দুইটা বা তার বেশি গ্যালারি অ্যাপ থাকে। এর মধ্যে কিছু মোবাইলে গুগল ফটো সেকেন্ডারি অ্যাপস হিসেবে থাকে।

যেমনঃ অপো কিংবা ভিভো মোবাইলগুলোতে আলাদা গ্যালারি থাকে।

আবার আমাদের দেশে কিছু কমদামি মোবাইল আছে যেগুলোতে গুগল ফটোজ অ্যাপসই প্রাইমারি গ্যালারি হিসেবে অবদান রাখে।

তবে আপনার মোবাইলে কোনো ফটো/ভিডিও সেভ করলে তা আপনি উভয় গ্যালারিতে দেখতে পারবেন।

এখানে উল্লেখ করা ফটোজ এর কিছু ফিচার দেখে নিনঃ

  • ফটো মেমোরি
  • পার্সন লিস্টিং
  • ফটো লোকেশন
  • গুগল ওয়ান ফিচার ( নতুন ব্যবহারকারীর জন্য)
  • অটো ব্যাকআপ
  • ব্যাকআপ করার সময় আপলোড কোয়ালিটি সিলেক্ট
  • লক ফোল্ডার
  • কলেজ ফটো মেকিং ( অসাধারণ থিম এর সাথে)
  • ফটো শেয়ারিং (ফটোজ ‍টু ফটোজ)
  • ফটো কমপেয়ার উইথ ওল্ড ফটো
  • লেন্স সার্চ ব্যবহার করে গুগলে যেকোনো ফটো সার্চ
  • ওয়েব ভার্সন এক্সেস

১. ফটো মেমোরি

সাধারণত আমরা যে সকল গ্যালারি ব্যবহার করে থাকি সেগুলোতে কখন কোথায় ফটো রাখা আছে তা গ্যালারিগুলো কখনোই আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় না।

এখানেই আছে গুগলের সেই সুবিধাটি। আপনার প্রতিটা ফটো মোবাইলে সেভ করার পর তা প্রতি বচর বছর গুগল আপনাকে মনে করিয়ে দিবে।

যেটাকে আমরা বলে থাকি ফটো মেমোরি।

এবং এই মেমোরি আপনার কাছে অটো নোটিফিকেশনের মাধ্যমে জানিয়ে দিবে।

২. পার্সন লিস্টিং

আমাদের প্রত্যেকের মোবাইলে শুধুমাত্র আমাদের নিজেদের ছবি থাকে না।

এখানে থাকে আমাদের পরিবারের কিংবা আমাদের বন্ধু-বান্ধবসহ আমাদের আত্মীয়-স্বজনের।

কি হবে যদি আপনার মোবাইলে আপনার বন্ধু যতগুলো ছবি আছে সবগুলো তার একটা ছবি দিয়ে আলাদা ফোল্ডার তৈরি হবে।

আসলে এমনটাই হচ্ছে। আপনার মোবাইলে যদি কোন ব্যক্তির ছবি একটির বেশি থাকে তখন গুগল ফটো অটোমেটিক ভাবে সেই ছবিগুলোকে পার্সন লিস্টিং করে দিবে।

মানে একটা ফোল্ডার তৈরি হবে। এবং সে ফোল্ডারের থাম্নেইলে আপনার বন্ধুর একটা কভার ফটো দিয়ে সবগুলো ফটো লিস্ট হয়ে যাবে।

৩. ফটো লোকেশন

আপনি কোন ফটোটি কোথায় তুলেছেন তা কি মনে রাখা সম্ভব?

বস্তুত না! কালণ, আপনার গ্যালারিতে এক বছর আগের ছবিও থাকতে পারে।

তখন আপনার মনে করতে কষ্ট হবে যে আসলে ছবিটি আপনি কোথায় তুলেছেন।

কিন্তু আপনি যদি গুগল ফটো অ্যাপসটি ব্যবহার করেন তাহলে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন যে আপনি ফটোটি কোথায় তুলেছেন বা কোন এরিয়াতে।

এবং সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো আপনি লোকেশনটি চেক করার জন্য সহজেই গুগল ম্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন।

৪. গুগল ওয়ান ফিচার ( নতুন ব্যবহারকারীর জন্য)

আপনার কোনো ফটো এডিট করার প্রয়োজন হলে আপনাকে যেকোনো ফটো এডিটিং অ্যাপস বা ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে হবে।

কিন্তু আপনি যদি গুগল ফটোজ ব্যবহার শুরু করেন তাহলে আপনি নতুন অবস্থায় গুগল ওয়ান এর এডিটিং ফিচারগুলো ফ্রিতে ব্যবহার করতে পারবেন।

যেমনঃ এক ক্লিকেই ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার করতে পারবেন। কিংবা এক ক্লিকেই কালার ব্ল্যাক হোয়াইট করতে পারবেন।

৫. অটো ব্যাকআপ

আপনি যখনই আপনার কোন ফটো মোবাইলে সেভ করবেন তখন তা অটোমেটিক ভাবে গুগল ফটো তার ক্লাউডে আপলোড করে নিবে।

এবং ইতোমধ্যে আপনারা জেনেছেন যে গুগল ফটোতে প্রতি মেইলে ১৫ জিবি স্টোরেজ ফ্রি।

এজন্যই গুগল ফটো এতো জনপ্রিয়। কারণ কোনো কারণে আপনার মোবাইল হারিয়ে বা নষ্ট হয়ে গেলে আপনি এই মেইল দিয়ে আবার সকল ফটো ফিরে পাবেন।

এছাড়াও অটো ব্যাকআপ অপশনটি আপনি চাইলে মোবাইল ডাটা কিংবা ওয়াইফাই দিয়ে সেট করতে পারবেন।

৬. ব্যাকআপ এর সময় কোয়ালিটি সিলেক্ট

যখনই আপনি আপনার মোবাইলের সকল ফটো/ভিডিও গুগল ফটোতে আপলোড করতে চাইবেন তখন আপনি ফাইল আপলোডের কোয়ালিটি সিরেক্ট করতে পারবেন।

এতে করে আপনি গুগল ফটোতে পাওয়া ফ্রি ১৫ জিবি ম্যানেজ করতে পারবেন।

৭. লক ফোল্ডার

আমাদের প্রত্যেকেরই প্রাইভেসি থাকে। এই প্রযুক্তির যুগে নিজের প্রাইভেসি বজায় রাখা খুবই কষ্টের।

আপনি যদি আপনার মোবাইলের ফটো/ভিডিও সিক্রেট রাভার জন্য কোনো মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করেন সেই অ্যাপসটিই আপনার ডেটা চুরি করবে।

সেখানে আপনি আপনার গ্যালারির ফটো গ্যালারিতেই লক করে রাখতে পারবেন।

এমনকি অন্যান্য থার্ড পার্টি অ্যাপস এর চেয়েও গুগল অ্যাপস অনেক নিরাপদ বলে আমি মনে করি।

৮. কলেজ ফটো মেকিং ( অসাধারণ থিম এর সাথে)

কলেজ ফটো মেকিং মূলত একটি এডিটিং থিম।

এবং এই থিমটি খুবই জনপ্রিয় কারণ অনেকগুলো ফটো একসাথে রেন্ডার করে নতুন একটা ফটো তৈরি করা যায়।

এতে করে আপনার অনেক সময় বাঁচে। তবে ফটোজ অ্যাপসে অনেকগুলো কলেজ থিম থাকে।

যেগুলোর মাধ্যমে আপনি সহজেই ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইন করতে পারেন।

৯. ফটো শেয়ারিং ( গুগল ফটো টু গুগল ফটো )

আপনার গ্যালারির কোনো ফটো অন্য কারো সাথে শেয়ার করার প্রয়োজন হলে আপনাকে আর আগের মতো শেয়ারআইটির মাধ্যমে শেয়ার করা লাগবে না।

আপনি চাইলে গুগল ফটোজ অ্যাপ থেকেই সহজে যে কাউকেই যেকোনো ফটো শেয়ার করতে পারবেন।

যাকে শেয়ার করবেনঃ

  • গুগল ফটোজ অ্যাপসটি ওপেন করবেন।
  • যে ফটো/ভিডিও শেয়ার করতে চাইবেন সেটি ওপেন করুন।
  • এবার শেয়ার বাটনে ক্লিক করে জিমেইল অপশন সিলেক্ট করবেন।
  • যাকে শেয়ার করতে চান তার ইমেইল বসান।
  • একবার তাকে শেয়ার করার পর পরবর্তী যেকোনো সময়ে অ্যাপস এর শেয়ারিং ফিচার থেকে সহজেই যেকোনো কিছু শেয়ার করতে পারবেন।

১০. ফটো কমপেয়ার উইথ ওল্ড ফটো

আপনি এখন আপনার গ্যালারিতে যতগুলো ফটো তুলবেন পরবর্তীতে এক বছর কিংবা দুই বছর পর একই পজিশনে যদি কোন ফটো তুলেন তাহলে তা অটোমেটিক কলেজ ফটো তৈরি হয়ে যাবে।

এবং আগের ছবিতে আপনি দেখতে যেমন ছিলেন এবং পরের ছবিতে দেখতে যেমন লাগে তা সহহজেই বুঝতে পারবেন।

এখানে সবচেয়ে সহজ ব্যাপার যেটা সেটা হল আপনাকে কোন প্রকার এডিটিং করতে হবে না কিংবা এটা নিয়ে ভাবতেও হবে না।

যা করবে তা সব গুগল ফটোজে করবে। শুধু আপনার মোবাইলে নোটিফিকেশন আসবে আর আপনি দেখবেন।

১১. লেন্স সার্চ ফিচার

গুগল থেকে কোন প্রোডাক্ট সম্পর্কে কিংবা কোন ফটো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে গুগলের ফটো সার্চ লেন্স ব্যবহার করা লাগে।

এক্ষেত্রে আপনি চাইলে আপনার ফটো গ্যালারি থেকে এক ক্লিকেই সার্চ লেন্স এর মাধ্যমে গ্যালারিতে থেকেই ফরোর বিস্তারিত জানতে পারবেন।

এক্ষেত্রে আপনাকে গুগলে একবারও যেতে হবে না।

১২. গুগল ফটো ওয়েব ভার্সন এক্সেস

আমাদের মতো ব্যবহারকারীর জন্য জনপ্রিয় যে ফিচার সেটা হল ওয়েব ভার্শন।

আপনি একবার চিন্তা করুন যে আপনি কখনো কোনো গ্যালারিকে মানে পুরো গ্যালারি অনলাইন থেকে দেখতে পেরেছেন কিনা?

এখানে আপনি কিন্তু পারবেন। আপনার মোবাইলের গ্যালারিতে যা আছে তা আপনি কম্পিউটার থেকেও দেখতে পারবেন।

বিশেষ করে যারা মোবাইল থেকে কম্পিউটারে ফটো ট্রান্সফার করে থাকে তাদের জন্য গুগল ফটোজ এর ওয়েব ভার্সন খুবই কার্যকর এবং দরকারি একটা ফিচার।

গুগল ফটো অ্যাপস ডাউনলোড করুন

এতক্ষণ পর্যন্ত ফটো অ্যাপস এর এতো এতো ফিচার দেখলেন বা জানলেন।

এখন যারা নতুন তারা কিভাবে এই অ্যাপসটি ডাউনলোড করবেন বা ব্যবহার করবেন?

আসলে প্রতিটা এন্ড্রয়েড মোবাইলেই বাই ডিফল্টভাবে গুগর ফটোজ অ্যাপসটি ডাউনলোড করা থাকে।

তাই আপনি আপনার মোবাইলে এই অ্যাপটি পেয়ে যাবেন।

আর না থাকার কোনো সুযোগই নেই। যদিও না থাকে তাহলে গুগল প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।

শেষ কথাঃ

গুগল ফটো অ্যাপ এর যত ফিচার আছে সেই ফিচার গুলো ব্যবহারের মাধ্যমে একটা নতুন এক্সপেরিয়েন্স উপভোগ করতে পারবেন।

প্রতিটা ফিচার সম্পর্কে উপরে বিস্তারিত আলোচচনা করা হয়েছে। পোস্টটি পড়লেই বুঝতে পারবেন। ধন্যবাদ!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Scroll to Top